বাস কিংবা গাড়িতে উঠলেই বমি হয় কেন?

Sesh Pata
0
আমরা অনেকেই জানিনা বাস কিংবা গাইতে উঠলেই বমি হয় কেন। এই সমস্যার সমাধান কি আদৌ কি সমাধান আছে।
গাড়িতে-উঠলে-বমি-হয়-কেন
আমাদের মধ্যে যারা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট তথা বাস কিংবা অন্য যে কোন গাড়িতে উঠতে পারি না। গাড়িতে উঠলেই বমি হয় মাথা ঘোরাই বা অন্য যেকোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি লিখা হয়েছে।

পেজ সূচিপত্রঃ

বাস কিংবা গাড়িতে উঠলেই বমি হয় কেন?

বাহ বাহ গাড়িতে উঠলে বমি হওয়ার কারণটি মূলত 'মোশন সিকনেস' বা গাড়ি জনিত অসুস্থতা নামেও পরিচিত। তবে শুধু বমি হওয়া না অনেকের যানবাহনের চলার সময় মাথা ঘোরায় অস্বস্তি ভাব মনে হয় এ সকল সমস্যার মূল কারণ হলো মোশন সিকনেস। এই সমস্যার কারণে শুধু শারীরিক ভাবে অসুস্থ নয় বরং ভ্রমণের আনন্দ নষ্ট করে ফেলে কিন্তু এমন হওয়ার মূল কারণ কি এর পিছনে কি কোন বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে? 
মোশন সিকনেস হলো এক ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া যা যানবাহনে চলাচলের পথে উঁচু-নিচু রাস্তা, গতি কমবেশি বা ঝাকুনির কারণে ঘটে। মানুষের শরীরে থাকা ব্রেন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে বিভিন্ন ধরনের সংকেত পেয়ে থাকে কিন্তু ঠাকুরের ফলে সেই সংকেত গুলোর মধ্যে সমন্বয়ে হারিয়ে যায় এতে মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয় এবং বমি মাথা ঘোরা সহ অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়।

বমি হওয়ার মূল কারণ কি

গাড়িতে উঠলেই বমি হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে সকল কারণে বমি হয় সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি নীচে বর্ণনা করা হলো:
  • ইনার ইয়ার ও মস্তিষ্কের সংঘাত:আমাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন অন্তঃকর্ণ শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রতিনিয়ত শরীরের বিভিন্ন সংকেত তারা মস্তিষ্কে পাঠায় কিন্তু চলতি পথে তার ব্যাঘাত ঘটতে পারে আর সেই ব্যাঘাত ঘটার কারণে মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয় ফলে বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • সেন্সরি কনফ্লিক্ট:যে সকল গাড়িতে অত্যন্ত ঝাঁকুনি অনুভব হয় বিশেষ করে পিছনে সিটে বসলে এটা বেশি হয়। এই আপনি তে আমরা মোবাইল ব্যবহার করি কিংবা অন্য যেকোনো বস্তুর দিকে স্থির ভাবে তাকিয়ে থাকি কিন্তু শরীর নড়াচড়া করে তখন শরীরে থাকা বিভিন্ন সেন্সর দ্বিধা দ্বন্দে পড়ে এবং মাথা ঘোরায় বমি বমি ভাব হয় ইত্যাদি।
  • অক্সিজেনের অভাব:অনেক ক্ষেত্রে গাড়িতে যাতায়াতের সময় জানালা বন্ধ করে এবং ভ্যান অফ থাকলে অক্সিজেনের অভাবের কারণেও বমি হতে পারে।
  • খালি পেটে যাত্রা:দীর্ঘ সময়ের জন্য যাত্রা শুরু করলে যদি ভ্রমণে বের হওয়ার পূর্বে কোন কিছু না খাওয়া হয় তাহলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বমির ভাব দেখা যায়।
  • অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ:গাড়িতে ওঠার আগে অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার বা মসলাযুক্ত খাবার খেয়ে যাত্রা শুরু করলেও বমির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে

কাদের বেশি সমস্যা হয়?

বাস বা গাড়িতে উঠলে বমি হওয়ার সমস্যাটি সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে বেশি দেখা যায় যেমন:
  • শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা: ২ থেকে ১২ বয়স বয়সী শিশুদের নিয়মিত গাড়ি চলার অভ্যাস না থাকলে এ সমস্যা হতে পারে।
  • গর্ভবতী নারী:গর্ভবতী নারীদের হরমোনের পরিবর্তনের ফলে গাড়িতে ওঠার পর বমি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • মাইগ্রেন বা মাথাব্যথায় রোগি: যাদের মাইগ্রেন বা মাথাব্যথার সমস্যা রয়েছে তারা গাড়িতে উঠলে তাদের মস্তিষ্ক উল্টাপাল্টা কাজ করে এবং সমস্যার সৃষ্টি করে।
  • যারা উদ্বেগ বা স্ট্রেসে ভোগেন: অল্পতেই যারা অতিরিক্ত চিন্তা করেন বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন তাদের মধ্যেও বমির প্রবণতা দেখা যায়।
  • অন্তঃকর্ণের সংক্রান্ত  রোগি: যাদের অন্তঃকর্ণ সংক্রান্ত রোগ আগে থেকেই রয়েছে তাদের গাড়িতে ওঠার আগে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কারণ এটি বমির একটি মূল কারণ।
  • যারা গাড়িতে পড়েন বা মোবাইল ব্যবহার করেন: চলন্ত অবস্থায় একভাবে কোন কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকলে (সেটা হোক মোবাইল অথবা যেকোন রকম বই) এই সমস্যা দেখা দেয়।
  • হজমজনিত সমস্যা থাকলে: গ্যাস্ট্রিক এসিডিটি বা হজমজনিত অন্যান্য যেকোনো সমস্যাই আক্রান্ত ব্যক্তি গাড়িতে উঠলে সমস্যা বৃদ্ধি পায় এবং মোশন সিকনেস বেড়ে যায় ফলে বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লক্ষণসমূহ চিনুন

গাড়িতে ওঠার পর বমি হওয়ার আগে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয় সেই লক্ষণ গুলো জানা থাকলে আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করা সম্ভব সেই লক্ষণগুলো হলো:
  • বমি বমি ভাব
  • মাথা ঘোরা
  • অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
  • মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
  • মুখ তেতো হয়ে যাওয়া
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • শ্বাসকষ্ট বা ক্লান্তি

গাড়িতে উঠে বমির লক্ষণ দেখা দিলে কি করা উচিৎ

বাস বা গাড়িতে উঠার পর বমির ভাব আসলে এবং কাছে বমি বন্ধ করার মত কোন ওষুধ না থাকলে বা কোন উপায় না জানা থাকলে কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করে দেখতে পারেন এতে বমির সম্ভাবনা কমতে পারে।
  • যদি আপনি পাহাড়ি এলাকায় থাকেন তাহলে উঁচু পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকুন।
  • আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকুন এতে মস্তিষ্ক গতির সঠিক ধারণা পায়।
  • আপনি গাড়ি জানালা খুলে তাজা বাতাস শ্বাস-প্রশ্বাসে গ্রহণ করুন এটি শ্বাস-প্রশ্বাসকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে এবং বমির ভাব কমায়। 
  • মাথা সোজা রেখে ফিটে বসুন প্রয়োজন হলে চোখ বন্ধ করে রাখুন। 
  • মোবাইল বই অথবা গাড়িতে থাকা অন্যান্য স্থির বস্তুর দিকে তাকানো থেকে বিরত থাকুন।
  • গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের কোন স্থির বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করুন। 
  • শরীরের স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।

গাড়িতে উঠে বমির পূর্বের প্রস্তুতি

যাদের বাস কিংবা গাড়িতে উঠলেই বমি হয় তারা গাড়িতে উঠার পূর্বেই এর সমাধান জেনে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। যেমন: সাধারণত বাসে উঠলে পিছনের সিটে অতিরিক্ত ঝুঁকি অনুভূত হয় তাই যতটা সম্ভব সামনের সিট নির্বাচন করার চেষ্টা করুন। ভ্রমণের আগে তেলে ভাজা বা ভারি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন তাই বলে কোন প্রকার খাবার না খেয়ে ভ্রমণ করাও উচিত না হালকা বা শুকনো খাবার অথবা ফল জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। 
আগে যদি আপনি গাড়িতে ওঠার পর বোম এর সমস্যায় পড়েন তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ সঙ্গে রাখতে পারেন। এবং ভ্রমণের আধা ঘন্টা আগে অথবা ডাক্তারের পরামর্শের মতো ওষুধ গ্রহণ করুন।এছাড়াও প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। আদা নিতে ভুলে গেলে ক্যান্ডি বা লজেন্স মুখে রাখতে পারেন তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী যাত্রার জন্য প্রযোজ্য নয়।

কোন গাড়িতে উঠলে বমি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি

যে সকল গাড়িতে সাধারণত বেশি ঝুঁকি অনুভূত হয় সে সকল বাস কিংবা গাড়িতে উঠলেই বমি হয়। বিশেষ করে লোকাল বাসের পিছনের সিটে বসলে ঝুঁকির কারণে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে অনেকের ট্রেনে উঠলেও এই সমস্যা দেখা দেয় আবার প্রাইভেট কারেও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই নির্দিষ্টভাবে কোন গাড়ির দোষারোপ করা ঠিক নয়। আবার এমনও বলা যাবে না যে সকল গাড়িতেই বমি হয়। কারণ যে সকল গাড়ি গতি নিয়ন্ত্রণ করে চলতে পারে সে সকল গাড়িতে ওঠা সেভ বলে মনে করি।

অনেক সময় গাড়ি নিয়ে পাহাড়ের রাস্তায় বা উঁচু-নিচু রাস্তায় চলাচল করতে হয় তখন সেই গাড়িতে থাকা যাত্রীদের মধ্যে বমি হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। তবে পাহাড়ি বা উঁচু নিচু রাস্তায় গতি নিয়ন্ত্রণ করে ভ্রমণ করলে সমস্যা থেকে বাঁচা সম্ভব। এছাড়াও আগে থেকে ডাক্তারের পরামর্শ মতে ওষুধ গ্রহণ করলে এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে না।

শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বাস কিংবা গাড়িতে উঠলেই বমি হয় কেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি একই সাথে বমি থেকে বাঁচার উপায় এবং বাসে ওঠার আগে কি কি করণীয় সেই বিষয় নিয়েও কিছুটা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি তাই যাদের বাসের উঠে বমি হওয়ার সমস্যা আছে তাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্টিকেল।

আপনার যদি এমন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আজকের আর্টিকেল থেকে উপকার পাবেন আর যদি আপনার এমন সমস্যা না থাকে তাহলে আপনার পরিচিত কারো এমন সমস্যা থাকলে তার কাছে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন আপনার একটি শেয়ারের মাধ্যমে অন্যের উপকার হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
3/related/default